Ticker

5/recent/ticker-posts

সূরা ফাতিহার মাহাত্ম্য ও শরীয় গুরুত্ব

মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: 'আমি সালাত পড়ছিলাম, এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে ডাক দিলেন, আমি কোন উত্তর দিলাম না। সালাত শেষ করে আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি আমাকে বললেনঃ এতক্ষণ তুমি কি কাজ করেছিলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা) আমি সালাতে ছিলাম। তিনি বললেন: আল্লাহ তা'আলার এই নির্দেশ কি তুমি শুননি? অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন: "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা) ডাকে সাড়া দাও যখন তাঁরা তোমাদেরকে আহ্বান করেন।" -(৮: ২৪) জেনে রেখো মসজিদ হতে যাবার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে বলে দিচ্ছি, পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সূরা কোনটি? অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে মসজিদ হতে চলে যাবার ইচ্ছে করলে, আমি তাঁকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি বলেনঃ এ সূরাটি হলো 'আলহাদুলিল্লাহী রব্বীল আলামীন' (সূরা ফাতিহা)। এটাই সাবআ মাসানী এবং এটাই 'কুরআনুল আযীম' যা আমাকে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই এই বর্ণনাটি সহীহ বুখারী, সুনানে আবি দাউদ এবং সুনানে ইবনু মাজাহর মধ্যে অন্য সনদে রয়েছে।

মুআত্তা-ই-ইমাম মালিকে রয়েছে যে রাসূল (সা) বলেন, এ সূরাটির (সূরা ফাতিহার) মত সূরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে নেই।

সহীহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈ এর মধ্যে হাদীস আছে যে, একদা হযরত জীবরাঈল (আ) রাসূল (সা) এর নিকট বসে ছিলেন, এমন সময় উপর হতে এক বিরাট শব্দ আসলো। হযরত জীবরাঈল (আ) উপরের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আজ আকাশের ঐ দরজাটি খুলে গেছে যা ইতিপূর্বে কখনও খুলেনি। অতঃপর সেখান হতে এক ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট এসে বললেনঃ আপনি খুশি হোন! এমন দুটি নূর আপনাকে দেওয়া হলো যা ইতিপূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। তা হলো সূরা-ই-ফাতিহা ও সূরা-ই-বাকারার শেষ আয়াতগুলো। এগুলোর এক একটি অক্ষরের উপর নূর রয়েছে। এটা সুনানে নাসাঈর শব্দ ।

সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ 'যে ব্যক্তি সালাতে উম্মুল কুরআন পড়লোনা তার সালত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ- পূর্ণ নয়।' হযরত আবু হুরায়রা (রা) কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ আমরা যদি ইমামের পিছনে থাকি তা হলে ? তিনি বললেনঃ তাহলেও চুপে চুপে পড়ে নিও। আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, 'সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধ-অর্ধ করে ভাগ করেছি এবং আমার বান্দা যা চায় আমি তা দিয়ে থাকি । আমার বান্দা যখন বলে, 'আলহাদুলিল্লাহী রব্বীল আলামীন' আমি বলি আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো, ......।'

সালাতে সূরা-ই-ফাতিহাহ্ পাঠ জরুরী কিনা এবং কুরআনের মধ্য হতে যা কিছু পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে-

ইমাম আবু হানিফা (রহ) এবং তার সহচরগণ বলেন যে, নির্ধারিতভাবে সূরা ফাতিহাই পড়তে হবে এটা জরুরী নয়। বরং কুরআনের মধ্য হতে যা কিছু পড়ে নিবে তাই যথেষ্ট। তাঁর দলিল হলঃ "কুরআনের মধ্যে যা কিছু সহজ তাই পড়ে নাও ।" -(৭৩:২০)

আরেকটি মত এই যে, সূরা ফাতিহা পড়াই জরুরী এবং অপরিহার্য এবং তা পড়া ছাড়া সালাত হয় না। ইমাম মালিক (রহ), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহ) এবং তাদের ছাত্রদের মত এটাই। তাদের দলীল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ 'যে ব্যক্তি যে কোন সালাত পড়লো কিন্তু তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করলো না, ঐ সালাত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ -পূর্ণ নয়।' তাদের এটাও দলিল যে, বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ 'যে ব্যক্তি '(সালাতে) সূরা-ই-ফাতিহাহ্ পড়ে না তার সালাত হয় না।'

আর মুকতাদীগণের উপর সূরা-ই-ফাতিহাহ্ পাঠ ওয়াজিব হওয়ার প্রশ্নে আলেমগণের তিনটি অভিমত-

সূরা ফাতিহা ইমামের উপর যেমন ওয়াজিব, মুকতাদির উপরও ওয়াজিব। তাদের দলিলঃ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন- 'যে ব্যক্তি সালাতে সূরা-ই-ফাতিহাহ্ পড়ে না তার সালাত হয় না।' এবং তিনি আরো বলেনঃ 'যে ব্যক্তি যে কোন সালাত পড়লো এবং তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করলোনা, ঐ সালাত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ- পূর্ণ নয়।'

মুকতাদীগণের উপর কিরআত একেবারে ওয়াজিব নয়। তাদের দলিল- মুসনাদে আহমাদের সেই হাদীস, যার মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ 'যার জন্য ইমাম রয়েছে, ইমামের কিরআতই তার কিরআত ।' কিন্তু বর্ণনাটি একান্ত দুর্বল।

যে সালাতে ইমাম আস্তে কিরআত পড়েন তাতে মুকতাদির উপর কিরআত (সূরা-ই-ফাতিহা) পাঠ করা ওয়াজিব। কিন্তু যে সালাতে উচ্চঃস্বরে কিরআত পড়া হয় তাতে ওয়াজিব নয়। তাদের দলিল হচ্ছে সহীহ মুসলিমের সেই হাদীসটি- তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ 'অনুসরণ করার জন্য ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁর তাকবীরের পর তাকবীর বলো এবং যখন তিনি পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাকো।' ইমাম শাফেঈর মত এটাই।

এসব মাসায়েল বর্ণনা করার উদ্দেশ্য এই যে, সূরা-ই-ফাতিহার সঙ্গে শরীয়তের নির্দেশাবলীর যতোটা সম্পর্ক রয়েছে অন্য কোন সূরার সঙ্গে ততোটা সম্পর্ক নেই।


তথ্যসূত্র:
  • তাফসীর ইবনে কাছীর