Ticker

5/recent/ticker-posts

কুরআন দ্বারা কুরআন তাফসীর

কুরআনুল কারীমের এক আয়াত দ্বারা অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন বা কুরআন দ্বারা কুরআনের ব্যাখ্যা। কুরআনের বহু স্থানে আমরা দেখতে পাই আল্লাহ্ তা'আলা প্রশ্নের আকারে আয়াত নাযিল করেছেন এবং এর জবাব তিনিই দিয়েছেন। আবার কোন আয়াতের প্রেক্ষাপট তার আগের কিংবা পরের আয়াতে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ কুরআনের কিছু আয়াতের অর্থ অন্য কিছু আয়াতের উপর নির্ভর করে। তাই কুরআনকে সহজ ও সঠিকভাবে বুঝতে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ জানা আবশ্যক।


উদাহরণ- ১

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
‘যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৮২]

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহ জাল্লা জালালুহু এ আয়াত নাযিল করলেন, তখন সাহাবীগণ (রাদিআল্লাহু ‘আনহুম) একে ভারী মনে করলেন। তাঁরা আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পাপের মাধ্যমে নিজের ওপর কোনো ‘যুলুম’ করে নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, তোমরা আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হও নি। আয়াতে ‘যুলুম’ বলে শিরককে বুঝানো হয়েছে। দেখ অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাআ‘লা বলেন,
‘আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম।’ [সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩]

কাজেই এ আয়াতের অর্থ হবে, যে ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর আল্লাহর সত্তা, নাম ও গুণাবলিতে এবং ইবাদতের বেলায় কাউকে অংশীদার না বানায়, সে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও সুপথপ্রাপ্ত।


উদাহরণ- ২

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
'কসম আকাশের এবং কসম রাতে আত্মপ্রকাশকারী। কিসে তোমাকে জানাবে রাতে আত্মপ্রকাশকারী কী?' [আত তারিক, আয়াত: ১-২]

তারপর তিনি পরবর্তী আয়াতে নিজেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেন,
'এটি উজ্জ্বল তারকা।' [আত তারিক, আয়াত: ৩]


উদাহরণ- ৩

এক আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
'দৃষ্টিসমূহ তাঁকে ধারণ করতেও অক্ষম।'

এ আয়াতের সাধারণ বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহকে দুনিয়া আখিরাতে কোথাও দেখা যাবে না। তবে অন্য আয়াতে আখিরাতের জীবনে ঈমানদারদের বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ্ বলেন,
'সে তার রবের প্রতি তাকিয়ে থাকবে' [আল কিয়ামাহ, আয়াত: ২৩]

আর তিনি কাফিরদের ব্যাপারে বলেছেন,
'কখনো নয়, নিশ্চিতভাবেই সেদিন তাদের রবের দর্শন থেকে তাদের আড়াল করে রাখা হবে।' [আল মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৫]

অতএব, অন্য কোন উৎস থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই স্বয়ং কুরআনুল কারীমের উপর নির্ভর করতে হবে যাতে কুরআন নিজেই নিজের ব্যাখ্যা দিতে পারে। কারণ আল্লাহ্ যা বুঝাতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।



প্রাসঙ্গিক বিষয়: